নতুন ঝুঁকি

একদিকে জিওপলিটিক্যাল চিন্তা, অর্থনৈতিক বিভাজন, অস্থির ফিনান্সিয়াল মার্কেটের ঝুঁকি, অন্যদিকে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বৃষ্টিপাত এবং দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মজবুত হওয়ার মাধ্যমে কিছুটা ভারসাম্য তৈরি হওয়ার মধ্যেই গত ৬ অক্টোবর ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (আরবিআই) এই বছরের জিডিপি বৃদ্ধির হার ৬.৫% হবে বলে পূর্বেকার অবস্থানেই অনড় থেকেছে। বেড়ে যাওয়া অনিশ্চয়তার একটা সময় ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছিল বলে অনুমান করা হয়েছিল। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক গত শুক্রবারই ইঙ্গিত দিয়েছিল, বিগত পাক্ষিক থেকে নতুন করে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। আর্থিক নীতি সংক্রান্ত পর্যালোচনার পরের দিনই ইজরায়েল-হামাস সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে গ্লোবাল ফুড, জ্বালানি এবং সার সরবরাহের উপর প্রভাব পড়বে বলে সতর্ক করেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। ভোটের মরসুমে সরকার উচ্চ মূল্যের আঁচ থেকে গ্রাহক এবং কৃষকদেরকে আড়াল করে রাখলেও জ্বালানি এবং সার আমদানির উপর ভারতের নির্ভরশীলতা, ব্যাঘাত বা মূল্য বৃদ্ধির কারণে ম্যাক্রো-ইকনমিক ফ্রেমওয়ার্কে আঘাত আসতে পারে। আরবিআই প্রধান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বন্ডের পরিণামের কথাও উল্লেখ করেছেন, যা বিগত ১৬ বছরের মধ্যে এই সপ্তাহে সর্বোচ্চ ৫% স্পর্শ করেছে। এছাড়া নতুন অজ্ঞাত হিসাবে রযেছে বিশ্বের বিভিন্ন ব্যাঙ্ক থেকে পাওয়া মিশ্র ডেটা পয়েন্ট এবং সিগন্যাল। যদিও ফিনান্সিয়াল মার্কেটের মতো জ্ঞাত অজ্ঞাতগুলোর উপস্থিতি আরও বেশি টের পাওয়া যাচ্ছে। এই উদ্বেগের এক ঝলক এই সপ্তাহে দেখা গিয়েছিল, যখন জুলাই মাসের পর থেকে ভারতীয় স্টক মার্কেটে সবচেয়ে বেশি শেয়ার বিক্রি করে দেওয়ার নজির দেখা যায়।

এরকম কোনো নিশ্চয়তা নেই যে আরবিআই এখনও উন্নয়নের ঝুঁকির ক্ষেত্রে ‘ভারসাম্যযুক্ত’ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করবে। অর্থমন্ত্রক আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তাগুলো বেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে নেওয়ার পাশাপাশি আপাতত অর্থনীতির জন্য নিজেদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির অবস্থান থেকে সরছে না বলেই মনে হয়েছে। গত সোমবার মাসিক অর্থনৈতিক পর্যালোচনার রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, উন্নয়ন “সঠিক রাস্তাতেই আছে”, জুলাই-আগস্ট মাসে “অস্থায়ী” মরসুমি বৃদ্ধির পর মুদ্রাস্ফীতি নিম্নমুখী, বাজারে চাহিদা বাড়ছে এবং বিনিয়োগও ক্রমশ “শক্তিশালী” হচ্ছে। অপরিশোধীত তেলের মূল্যবৃদ্ধির যে “আসন্ন ভয়” দেখা যাচ্ছে, সেই ব্যাপারে রিপোর্টে বলা হয়েছে যে ২০২২-২৩ সালের প্রথম এবং দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের গড়পড়তা ১০৯.৫ এবং ৯৭.৯ ডলারের চেয়ে জুলাই-সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে দাম “অনেক কম” ছিল। পরবর্তী দুটি ত্রৈমাসিকে দুর্বল ফরেন ট্রেডের ছবির কিছুটা উন্নতি হবে এবং শিল্প ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান বাড়বে বলে প্রত্যাশা রয়েছে। রিপোর্টে আরও বলা হয়, হাউজিং এবং গাড়ির লোনে উচ্চতর চাহিদা থেকে প্রমাণ হচ্ছে যে গৃহস্থালিতে আত্মবিশ্বাস আগের চেয়ে বেড়েছে। ভারতের ম্যাক্রো ফান্ডামেন্টাল উপাদানগুলো সর্বশেষ গ্লোবাল ঝড়ে টিকে যেতে পারে। তবে সরকার কনজাম্পশন এবং নিয়োগের ট্রেন্ডে কিছুটা গভীরতা প্রদর্শন করলে তা ভালো হবে। গত ত্রৈমাসিকে ছোট গাড়ির বিক্রিতে ব্যাপক পতন দেখা যায়। কনজ্যুমার নন-ডিউরেবল প্রোডিউসাররা গ্রামাঞ্চলে দুর্বল চাহিদার কথা উল্লেখ করেছেন। আইটি সংস্থাগুলোর বৃদ্ধিও কমছে এবং নিয়োগের আশা নিম্নমুখী। অসমান রিকভারি সংশোধন করার জন্য আরও অনেক কিছু করতে হবে, যা সব শেষে বৃহত্তর বিনিয়োগ পুনরুজ্জীবনে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।