প্রতীক, নির্যাস

গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নতুন পার্লামেন্ট ভবনের উদ্বোধন করেছেন। তিনি যে স্টাইলের ওপর দক্ষতা অর্জন করেছেন, সেটাই এই অনুষ্ঠানে ফুটে উঠেছে। প্রতিটি উপলক্ষ বা অনুষ্ঠানে তিনি রাজনীতির রঙ লাগিয়েছেন, যা নিয়ে তার সমালোচকদের অনেক আপত্তি রয়েছে। সংসদের নতুন ভবনের মাধ্যমে ভারতের বৈচিত্র, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং ক্রমবর্ধমান উচ্চাকাঙ্খাকে তুলে ধরা হয়েছে। অনুষ্ঠানের অংশ হিসাবে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। তবে যেটা বলাই বহুল্য যে, হিন্দু রীতি-নীতিগুলো বাকি সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে। তামিলনাড়ুর শিবাইত সম্প্রদায়ের তরফ থেকে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রীকে যে প্রথম উপহারটি দেওয়া হয়েছিল, সেই সেঙ্গোলের আশেপাশে একটি দক্ষতাপূর্ণ কাহিনী তৈরি করে বর্তমান শাসকগোষ্ঠী ভারতের প্রজাতান্ত্রিক সার্বভৌমত্বের মূল নীতিগুলোকে নতুন করে সাজিয়ে তোলার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। সেঙ্গোলের মাধ্যমে ঐশ্বরিক অধিকার প্রস্ফূটিত হয়েছে। এখন সেটি জনগণের প্রতিনিধিদের সভাতে ইনস্টল করা হলো। এই প্রতীকী বিষয়টি ভারতের রাজনৈতিক কেন্দ্রের সাথে তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক সংযোগকে আরও মজবুত করেছে। তবে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এর মধ্যে থেকে রাজনৈতিক ফায়দা পাওয়ার চেষ্টা করছে। এছাড়া উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো উদ্বোধনের দিনেই ছিল হিন্দুত্ববাদের মূল প্রতিষ্ঠাতা ভি.ডি সাভারকরের জন্মদিন। অনুষ্ঠানের স্টাইল এবং নির্যাসের মাধ্যমে ভারতীয় প্রজাতান্ত্রিক কাঠামোতে যে নতুন বিষয়টি প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে, তা ফের একবার স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

এই নতুন বিল্ডিংয়ের মাধ্যমে স্পটলাইটেও পরিবর্তন হতে চলেছে। আগামী দশকে ভারতে প্রতিনিধিত্বের মধ্যে যে চ্যালেঞ্জ দেখা যেতে পারে, সেটিও ক্রমশ অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠছে। বর্তমান জনগণ অনুযায়ী, দেশজুড়ে সীমাবদ্ধতার ফলে প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে পরিবর্তন ঘটবে। এর ফলে পার্লামেন্টে দক্ষিণের রাজ্যগুলোর ভাষাগত সংখ্যালঘুদের কণ্ঠস্বর উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে। যে রাজ্যগুলো নিজেদের জনসংখ্যা স্থিতিশীল করেছে, তাদের প্রতিনিধিত্ব যাতে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস না পায়, তা নিশ্চিত করতে লোকসভা এবং রাজ্যসভার আকার বাড়তে পারে। তবে ভারতীয় রাজনীতিতে ভৌগলিক অঞ্চলভিত্তিক যে বিভাজন তৈরি হয়েছে, তার জেরে ইতোমধ্যে অনেক জায়গাতে অধিকারহীনতার যে অনুভূতি তৈরি হয়েছে, তা প্রশমিত করার জন্য এটি হয়তো পর্যাপ্ত নয়। বিজেপি নিজেদের শক্তির কারণেই পার্লামেন্টারি সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। তবে এটাও ঘটনা, অনেক অঞ্চল তাদের প্রভাবের বাইরে রয়েছে। ৩৮% জনপ্রিয় ভোটের ক্ষেত্রে, বিজেপি বর্তমানে লোকসভার ৫৫% আসন দখল করেছে। সীমাবদ্ধতার পর এই ভারসাম্যহীনতা আরও বৃদ্ধি পাবে। বিজেপি বর্তমানে যে সব জায়গায় সক্রিয়, তার বাইরে গিয়ে জনসমর্থন তৈরি করার প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাতেই হবে। তবে কেন্দ্র এবং বিজেপি, উভয়কেই ভারতে আঞ্চলিক ভারসাম্যহীনতার মোকাবিলা করার জন্য আরও বেশি গুরুত্ব, সংবেদনশীলতা ও পরিপক্কতা দেখাতে হবে। এর জন্য তাদেরকে প্রতীকী অর্থের বাইরে গিয়ে, আরও প্রাসঙ্গিক পন্থা অবলম্বন করতে হবে।